৫০ ঊর্ধ্ব একজন নারী,নাই অভিভাবক নাই কোন ঠিকানা । দীর্ঘদিন যাবত ২ স্তনে ক্ষত ও ক্ষতের মধ্যে পোকা (ম্যাগোটস) নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এই নারী এবং এই অবস্থায় ভর্তি হন বাগেরহাট সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে। পরীক্ষা করে জানা যায় স্তন ক্যান্সার(Stage 04)।শেষ পর্যায়ে এসে আসলে প্যালিয়েটিভ চিকিৎসা ছাড়া খুব বেশি কিছু করার নেই। কিন্তু হাল তো ছাড়া যাবে না।
সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. ফারুকুজ্জামান এর নেতৃত্বে শুরু হল পরিকল্পনা এবং প্রথমেই সিদ্ধান্ত হল অপারেশন করা হবে। কিন্তু রোগীর মারাত্মক রক্তশূন্যতা এতে ক্যানুলার মত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া তে যাওয়াও না।
অ্যানাস্থেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. ইসকান্দার আলম রোগীর শরীরে এমন একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন যা সাধারণত আইসিইউ রোগীর জন্য করা হয় এবং এই পর্যায়ের হাসপাতালে এই ধরনের কাজ সচরাচর করা সম্ভব হয় না।
যেহেতু বেশ কয়েক ব্যাগ রক্ত দরকার, রক্ত দানের জন্য এগিয়ে আসেন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক সাকিব, জাহিদ, মিজানরা। সেই সেছাসেবিরাই স্বল্প সময়ে চার-পাঁচ ব্যাগ রক্ত যোগাড়, হিস্টোপ্যাথোলজির জন্য স্পেসিমেন নিয়ে যাওয়া, দরকারি জিনিসপত্র কিনে এনে দেওয়া পর্যন্ত এসব কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন তারা।
অপারেশনের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অন্যান্য জিনিসপত্র যেসব হাসপাতাল সাপ্লাই দিতে পারেনি, সেগুলো যোগাড় করে দিয়েছে হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগ। সমাজসেবা অফিসার জনাব প্রবির রায় অপারেশন চলাকালীন ওটির বাইরে পুরো সময়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন যে কোন প্রয়োজনে সাহায্য করতে পারেন।
মাস ছয়েক আগে কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. ফারুকুজ্জামান, কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক্স) ডা. এস এম শাহনেওয়াজ হোসেন, কনসালটেন্ট (অ্যানাস্থেসিয়া) ডা. ইসকান্দার আলম, কনসালটেন্ট (গাঈনি & অবস) ডা. ডালিয়া হালদার, কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. সাঈদ আহমেদ এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় "Breast Cancer Research Unit" নামে একটি স্বতন্ত্র ইউনিট চালু করেন হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার।এই ইউনিটের আওতায় এখন পর্যন্ত অনেকগুলো ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীকে সেবা দেওয়া হয়েছে।
ডা. ফারুকুজ্জামানের হাত ধরে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি, লঙ্গো সার্জারিসহ সার্জারির আধুনিক অনেক সেবা চালু হয়েছে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে। অনেক ধরনের ফ্লাপ, গ্রাফট সার্জারি প্রথমবারের মতো হয়েছে এখানে।
এছাড়া এই হাসপাতালে আরও কিছু জটিল সার্জারি তারা যোগ করতে সক্ষম হয়েছেন, যা এ পর্যায়ের হাসপাতালে সহজে করা সম্ভব হয় না । অন্যদিকে এই হাসপাতালে এপিডুরাল অ্যানাস্থেসিয়ার প্রথম কেসই এটি যা সাম্প্রতিক সংযোজন হয়েছে ।
এই রোগীর চিকিৎসার প্রথম থেকে প্রতিটি ধাপ সরাসরি তদারকি করছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমদ্দার। এমনকি অপারেশনের সম্মতি পত্রে রোগীর অভিভাবক হিসেবে স্বাক্ষরও করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, অপারেশন পরবর্তী কেমোথেরাপির ব্যপারেও ডাঃ অসীম কুমার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তৎপর।
গত ২ ফেব্রুয়ারি, বাগের সদর হাসপাতালে এমন শ্বাসরুদ্ধকর চিকিৎসায় যে সকল চিকিৎসক নিয়োজিত ছিলেন, তারা হলেন ডা. ফারুকুজ্জামান ফারুক, ডা. এস কে আদনান, ডাঃ জব্বার ফারুক, ডা. ইস্কান্দার আলম ও ডা. ইন্দ্র বিশ্বাস। এছাড়াও এই রোগীর চিকিৎসায় স্বতঃস্ফূর্ত অবদান রয়েছে মেডিকেল অফিসার, নার্স, সমাজসেবা অফিসার, ইন্টার্ন, ওটি বয়, স্বেচ্ছাসেবকসহ সবার ।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, রোগীর অবস্থা ভালো। পুরোপুরি ক্ষত সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত হাসপাতালের চিকিৎসকরা সকল ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS